রবিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

অন্যায়ের দম্ভকে ভাঙো কাব্যের কালিতে সাজিয়ে দাও জ্ঞানের প্রাসাদ ! # ৬০

অন্যায়ের দম্ভকে ভাঙো কাব্যের কালিতে সাজিয়ে দাও জ্ঞানের প্রাসাদ !

সদ্য সমাপ্ত জেএসসি পরীক্ষা চলাকালে একটি বিভাগীয় শহরে যাই সরকারি কাজে। রাস্তায় বহু মানুষের জটলা দেখে "ইজি বাইক" থেকে উঁকি দিয়ে রাস্তায় রক্তাক্ত এক ১২/১৩ বছরের ফুটফুটে মেয়ে দেখে শিউরে উঠি আমি। নেমে জানতে পারি একটু আগে সাদিয়া আক্তার নামের এ জেএসসি পরীক্ষার্থী মেয়েটি পরীক্ষা দিতে যাওয়ার পথে ট্রাকের চাপায় মারা গেছে। সেও একটা ইজি বাইকে ছিল, অন্য গাড়ির ধাক্কায় তার বাইকটি কাত হয়ে পড়ে গেলে মেয়েটি পরে গিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে যায় কিন্তু হঠাৎ যমদূত হিসেবে একটা ট্রাক এসে খাতা কলম হাতের মেয়েটির মাথা থেতলে দেয় এবং তাৎক্ষণিকভাবে মেয়েটি প্রাণ হারায়। পথচারিরা ধাও্য়া করে ড্রাইভারসহ ট্রাকটি আটক করে পুলিশকে খবর দেয়।

মৃত্যু সংবাদ শুনে সবজি বিক্রেতা বাবাও ছুটে এসেছেন ঘটনাস্থলে। এক সময় পুলিশ এসে রাস্তা থেকে গাড়িতে রক্তাক্ত মেয়েটির লাশ তোলে পোস্ট মর্টেমের জন্যে। কিন্তু বিস্ময়করভাবে মেয়েটির বাবা সকল মানুষের সামনে পুলিশকে আপ্লুত কণ্ঠে বলতে থাকে, "আমার মেয়ের 'হায়াত' না থাকার কারণে সে মারা গেছে, তাই কোন ট্রাকের বিরুদ্ধে অভিযোগ বা পোস্টমর্টেম করাতে চাইনা আমি আমার মেয়েকে। আমি তাকে ধর্মীয় রীতিতে দাফন করতে চা্ই, আর আপনাদের থেকে আমার মেয়ের জন্যে দোয়া চাই"। অনেক পথচারীও তার কথাকে সাপোর্ট করলো ধ্বনি দিয়ে। নানা বাক বিতন্ডার পর এলাকার মানুষের হস্তক্ষেপে পুলিশ বাধ্য হলো বাবার হাতে সদ্য মৃত মেয়ের লাশ হস্তান্তরে।

আমি এক অসহায় বাবার সকরূণ আর্তি আর ভাগ্যের হাতে নিজেকে সমর্পণ, আর ১৩ বছরের অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া ঝকঝকে মেয়েটির অকাল মৃত্যু পরবর্তী ঘটনা রুদ্ধশ্বাসে দেখতে থাকি অবলীলায় পরাজিত সৈনিকের মত। তকদিরবাদী এ সমাজে মানুষের আর্তি আর বোধ আমাকে বার বার ধিক্কার দিতে থাকে মেয়েটির রাস্তায় শুকিয়ে যাওয়া রক্ত দেখিয়ে। কি সমাজ আর বোধের মাঝে আমরা বসবাস করছি তার ধিক্কারে আমি রক্তাক্ত হতে থাকি মেয়েটির মতই।

গতকাল ঐ সড়ক দিয়েই ঢাকা ফিরছিলাম আমি। আমার বাইকটি যখন মৃত মেয়েটির স্পটে এলো, প্রচণ্ড রোষে আমায় চেপে ধরলো সাদিয়া নামের মৃত মেয়েটি। সে সুষ্পষ্ট স্বরে আমার স্বরতন্ত্রী জ্বালিয়ে বলতেই থাকলো কোন এক নামহীন কবির অবোধ কথামালা। যা আমার নিউরনে বাজতে থাকে অনুক্ষণ এভাবে-

"সৃষ্টি দিয়ে ভাঙো, জীবনের অপূর্ণতা, জীর্ণ সংস্কারের খিলি, চন্দ্রবিন্দুর নদীতে। যেখানে ব্যর্থতা,গড়ে তোল চোখের বালি। সমাজ সংসারে, অন্যায়ের দম্ভকে, ভাঙো কাব্যের কালিতে, বদলে দাও সাজিয়ে দাও, জ্ঞানের প্রাসাদে, স্বপ্নের ডালিতে। ধরো সত্যের গান, রাখো মানির মান, বিবেকের ধারাপাতে, এক সাথে গাঁথা বর্ণ, বাঁধো তাঁতীর মতো জীবনের আদালতে। সংখ্যালঘু অন্যায়ের কারিগর, আকাশের থোকা কালো মেঘ, তন্দ্রা ছাড়ো, আঁখি মোছো, ভাঙো বিঘ্নের দ্বার, গড় মনে সত্য কথিকা। দিগন্তব্যাপী তীব্র প্লাবন আনো, শৃঙ্খলতায়, ন্যায়ের পক্ষে গান, বেপরোয়া অনিয়মের সিঁড়িঁ, বিদ্রোহ করো, রাখো কবিদের মান। তুমি কবি, লিখো কবিতা,মনে রঙ রাঙিয়ে সাহিত্যের রূপরসে জ্বলুক আগুন, উঠুক তুফান, কাব্যমনে, অন্যায় যেন যায় ধ্বসে। এ হোক দ্রোহি জীবনের গান।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন