রবিবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

নদী নির্ভর মানুষের দুখে ভরা জীবন দহন ! পর্ব : ১ [কাব্যিক গল্পমালা সিরিজ] গল্প # ৪৮


আমার জন্ম হয়েছিল একটি যোগাযোাগ বিচ্ছিন্ন জেলে প্রধান দ্বীপে। আমার মনে হতো আমার গ্রামটিই মানিক বন্দো্পাধ্যায়ের "কেতুপুর" গ্রাম, যেখানে ঈম্বরকে খুঁজে পাওয়া যায়না, তবুও সবাই ইশ্বরনির্ভর। ভাগ্যনির্ভর মানুষ সব কিছুর জন্য অলৌকিকতাকে দায়ী করতেন (এখনো করে), এমনকি নদী ভাঙন তাদের পাপের ফল এ কথাও ব্যাপকভাবে প্রচার করতেন এলাকার পীরসাহেব ও ধর্মীয় নেতারা, ধর্মান্ধ মানুষ তা বিশ্বাসও করতো মনেপ্রাণে। কতবার আমার দ্বীপে নদী ভাঙন রোধে নদীতে তাবিজ ফেলা হয়েছিল, নদীর তীরে গণমুনাজাতের আয়োজন করা হয়েছিল, মৌলানার নেতৃত্বে রুটিতে আয়াত লিখে হাজারো রুটি নদীতে নিক্ষেপ করা হয়েছিল, তার ইয়াত্তা নেই। তারপরো নদীর ভাঙন থামেনি, কারণ নদীর ভাঙন সম্পর্কে যৌক্তিক কথা হচ্ছে নিম্নরূপ, যা তারা জানে না।


নদীভাঙন, এক প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ। নদীর সমুদ্রে গিয়ে পড়ার সময় সাধারণত সমুদ্রের কাছাকাছি হলে তীব্র গতিপ্রাপ্ত হয়। তখন পানির তীব্র তোড়ে নদীর পাড় ভাঙতে থাকে। নদীর পানির স্রোতে নদীর পাড় ভাঙার এই অবস্থাকে নদীভাঙন বলে।

পানিচক্রের প্রভাবে পর্বতের গায়ে বরফ জমে, সেই বরফ গলা পানি পর্বতের গা থেকে নেমে আসে। এভাবে নদীর সৃষ্টি হয়। নদীর এই পানি সমুদ্রের দিকে ধাবিত হয়। সাধারণত সমুদ্রের কাছাকাছি অংশে নদীর পানি তীব্র গতিতে ছুটে চলে। এছাড়াও বর্ষা মৌসুমে উজানে তীব্র বৃষ্টিপাত হলেও নদীর পানি বেড়ে যায়। তখন নদীতে স্রোতও বেড়ে যায়। নদীর এই তীব্র স্রোত ভাটার দিকে চলার পাশাপাশি নদীর পাড় আঘাত করতে থাকে। পানির এই ক্রমাগত তীব্র আঘাতে নদীতীরবর্তী ভূভাগ ক্ষয় হতে থাকে। একসময় মাটি ক্ষয় হতে হতে যখন উপরের মাটির ভার সহ্য করতে পারে না, তখন উপরের অক্ষয় মাটিসহ নদীপাড়ের বিশাল অংশ বা চাড়া নদীর মধ্যে ভেঙে পড়ে। এসব কারণে ভাঙন এলাকায় নদীর পানি হয় গলিত মাটিপূর্ণ, ঘোলা।

আরো একটি কারণে এমনটা হতে পারে। সাধারণত নদী, তার পানির গতিপথে কোনো বাধা পেলে তাতে তীব্র আঘাত করে। নদী, গতিপথ বদলাবার সময় যেদিকে গতি বদলায়, সেদিকের পাড়ে বারবার তীব্রগতিতে আঘাত করতে থাকে। সাধারণত উপকূল এলাকা পলিগঠিত হওয়ায়, নরম পলিমাটির স্তর সেই আঘাত সহ্য করতে না পেরে ভেঙ্গে পড়ে। এভাবে নদী একদিকের পাড় ভাঙতে থাকলেও অপর দিক থেকে গতি বদলে নেয় বলে অপর দিকে গলিত পলিমাটি নিয়ে জমা করতে থাকে। তাই নদীভাঙনের মাধ্যমে নদীর একপাড় ভাঙে, আরেক পাড় গড়ে।


লেখাটি ফেসবুকে দেখতে চাইলে নিচের লিংকে যান প্লিজ




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন