রবিবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

প্যাসিফিকে ৩-দিন সমুদ্র-সহবাস ও ডলফিন বন্ধুত্বে স্বাপ্নিক দেশে গমন : পর্ব-১ [ স্বাপ্নিক গল্পসিরিজ : ৩০ ]




৩ পর্ব গল্পের ১ম পর্ব
:
বেশ কদিন সমুদ্রে ভাসতে ভাসতে একটা বালুতট পেলাম আমি। কিন্তু রাতের ঘনান্ধকারে কিছুই দেখতে পেলাম না বিপন্ন বোধের ব্যাকরণিক জটিলতায়। অন্ধকার প্রকৃতির মৌন কাফেলায় চিকচিকে বালিতে ঘুমিয়ে পড়লাম প্রায় ৭০/৮০ ঘন্টার সমুদ্র সাঁতার শেষে। কতক্ষণ ঘুমালাম জানিনা আমি। জ্বলজ্বলে সূর্যতাপে চোখ মেলে দেখি, সকালের শিশু-রোদ উবে গিয়ে মাথার উপরে সূর্য নাচছে তার যৌবনময়তায়। বিগত ৩-দিনে কিছুই খাইনি আমি সমুদ্রের নোনা জল আর বৃষ্টির সামান্য কফোটা পানি ছাড়া। মনে পড়লো 'ফিজি' থেকে 'টোঙ্গা' গিয়েছিলাম আমি দিন দশেক আগে বেড়াতে। টোঙ্গার Kukualfa থেকে দেশি নৌকায় 'সামোয়া' যাওয়ার পথে ঝড়ে পড়েছিল নৌকো। ১২-জন যাত্রী ছিলাম নারী-পুরুষ মিলে আমরা ঐ বোটে। ৩-জন সামোয়ান মাল্লা ছাড়া সবাই ছিল ইউরোপিয়ান শেতাঙ্গ আর আমি। শান্ত সমুদ্রে সামোয়ার কাছাকাছি প্রায় পৌঁছে গিয়েছিলাম আমরা। কিন্তু প্রশান্ত মহাসাগরিয় ঘুর্ণিঝড় হঠাৎ উল্টে দিলো আমাদের নৌকাটিকে। একটা ছোট লাইফ জ্যাকেটে ভাসলাম কাকচোখা দিগন্তের নীলাদ্রির নীল জলে একাকি আমি। অনেক জলজ হিংস্র প্রাণি আর হাঙরেরা ঘুরে গিয়েছিল আমার শরীরের আদিম ঘ্রাণে কিন্তু বিপন্ন মানুষদের পাশে সম্ভবত 'সমুদ্র নাস্তিক' ডলফিনরা এগিয়ে আসে। আতঙ্ক আর ভয় মিশ্রিত দু:খের যাপিতকালে যখন শিকারি স্পিনার, কিয়াম আর ব্লাকটিপ হাঙরেরা নুনজলে অবসপ্রায় সাদা পা কেটে নিতে চায় আমার, তখন অলৌকিক ভালবাসার পতাকা হাতে হাজারো অতলান্তিক মহাসাগরীয় বটলনোজ ডলফিন, হাম্পব্যাক ডলফিন, ইউরিহ্যালাইন ডলফিন, স্নাবফিন ডলফিন আর রাঙা ঠোঁটের মেকং ডলফিনগুলো তীব্র জলতাড়না তুলে তাড়িয়ে দেয় মাংসভুক হিংস্র হাঙরদের। রঙিন আর ধুসরমুখো ডলফিনের ঝাঁক এসে সমুদ্রে আলো সৃষ্টি করে আমায় আগলে রাখে ধর্মান্ধ হাঙর সন্ত্রাসি থেকে। 
:
নানা রং আর চেহারার হাজারো ডলফিনের ঝাঁক বেরিং স্রোত হয়ে আমায় নিয়ে যায় উষ্ণ কুরোশিয়ো স্রোতের দিকে। এ স্রোতাঞ্চলে ঘন কুয়াশা ও ঝড়বৃষ্টির মাঝে আমি কেবল চারদিকে চলমান ডলফিন ছাড়া আর কিছু্ই দেখিনা তখন। দুদিন পর এক ঘূর্ণস্রোতের অভ্যন্তর ভাগের জলাবর্তে ভেসে স্রোতবিহীন সমুদ্রতটে রেখে যায় আমায় ডলফিন সৈনিক বন্ধুরা। এক অদ্ভুৎ আনন্দধ্বনি করতে করতে তারা হারিয়ে যায় গভীর সমুদ্রে। স্রোতহীন সমুদ্রের স্থির জলে নানারূপ শৈবাল, আগাছা, তৃণ, উদ্ভিদ আর সপ্তরঙা জলজ বৃক্ষবাগানের দিকে চেয়ে থাকি আমি প্রকৃতির অমোঘ নৈকট্যে। সূর্য কখন হেঁটে যায় দুপুরের দিকে, তাই রোদ-তাপের সাথে আদিম ক্ষুধারা হানা দেয় পুরো শরীরে আমার। উঠে দাঁড়াই আমি ঘন বনের দিকে খাবারের খোঁজে। মানুষহীন এ দ্বীপজঙ্গলে কিভাবে খাবার পাবো, ঘন জঙ্গলের মাঝে খাবার আছে কিনা এ চিন্তনে এগুতে থাকি সৈকত ছেড়ে উঁচু বাগানের দিকে।
:
প্রত্নতাত্ত্বিক অজানা এ দ্বীপের ইতিহাস উল্টে রেখে সামনে এগুতেই স্বাপ্নিক দৃষ্টিভ্রমে উড়ে যাই আমি এক মোহময়তায়। গুমোট অন্ধকারে অজস্র আলোর ঝলকানির মতো অদূরেই বেশ কজন মানুষ দেখতে পাই আমি। নারী-পুরুষ-শিশু সবাই সমবেত হয়েছে একটা অনুষ্ঠানে মনে হলো। প্রত্যেকেই খাবার নিতে একটা লাইনে দাঁড়িয়ে। হয়তো খাবার রেস্টুরেন্ট হবে এটি। ক্ষুধাতুর আমি দ্রুত হাঁটি খাবার সংগ্রহে। কাছে গিয়ে বিস্মিত চোখে তাকাই্ চারদিক। সব মানুষ এখানে নিরাভরণ। হয়তো পোশাক নেই এ দ্বীপের মানুষের। কেউ কোন কথা বলছে না মনে হলো মৃতদের ঘর। কাছে গিয়ে জানতে চাই, খাবার কার কাছে পাবো আমি? শব্দ শুনে সবাই তাকায় চোখ বড় করে আমার দিকে। ভাষা বুঝতে পারেনি মনে করে ইংরেজি, বাঙলা, হিন্দি আর আরবিতে বলি একই কথা। মনে হলো এক অদ্ভুৎ কথা শুনছে তারা। আবার পুনরাবৃত্তি করি আমার জানা ৪-ভাষাতেই। একজন ইশারায় ডাক দেয় আমায়। খাবারের কাছে থাকা মানুষটিকে মনে হলো নারী। কাছে গেলেই বড় পাতায় নানাবিধ ফল আর সব্জি মিশ্রিত কাঁচা খাবার তুলে দেয় আমার হাতে পর্দা আর হিজাবহীন এ দ্বীপ নারী। মিনিটের মধ্যে তা শেষ করে আবার হাত পাতি আমি। ক্ষুধা তখনো শেষ হয়নি আমার, ৩ দিনের অভুক্ত আমি। এবার সবাই একযোগে হাততালির মত অদ্ভুৎ ইশারা করে। দুজন লোক এসে একটা বড় খাবারের স্তুপের কাছে নিয়ে যায় আমায়। আমি পেট ভরে খেয়ে ক্লান্তিতে মাটিতেই্ শুয়ে পরি ওখানেই। অচিন দেশের ভয়ানক নৈ:সঙ্গের ভেতরও আমি এক আঁশটে তান্ডবের নির্ঝর নৈ:শব্দ্য শুনতে পাই। 



লেখাটি ফেসবুকে দেখতে চাইলে নিচের লিংকে যান প্লিজ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন