রবিবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

নদী নির্ভর মানুষের দুখে ভরা জীবন দহন ! পর্ব : ২ [কাব্যিক গল্পমালা সিরিজ] গল্প # ৪৯

48টির 1 - 25 

বাংলাদেশে, সাধারণত বর্ষাকালে উজানে প্রচুর বৃষ্টিপাতের দরুন নদীর পানি বেড়ে যায় এবং তা প্রচন্ড গতিতে সমুদ্রের দিকে ধাবিত হয়। এসময় উপকূলীয় অঞ্চলের নদীসংলগ্ন স্থলভাগে পানির তীব্র তোড়ে সৃষ্টি হয় নদীভাঙনের। বাংলাদেশে এটা স্বাভাবিক চিত্র হলেও সাম্প্রতিক গবেষণায় তা আর স্বাভাবিক বলে পরিগণিত হচ্ছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া তথ্যমতে, পদ্মা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা অববাহিকার প্রায় ১,২০০ কিলোমিটার জুড়ে ভাঙন অব্যাহত আছে। আরও প্রায় ৫০০ কিলোমিটার এলাকায় নতুন করে ভাঙন দেখা দিতে পারে। এতে কৃষি জমির এক বিরাট অংশ নদীগর্ভে তলিয়ে যাবে। অথচ এর বিপরীতে যে চর জেগে উঠছে, তা অপ্রতুল।

বাংলাদেশের পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সার্ভিসেস (CEGIS) উপগ্রহের মাধ্যমে সংগৃহীত উপাত্ত বিশ্লেষণে বেরিয়ে এসেছে যে, ১৯৭৩-২০০৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভোলার মূল ভূভাগ থেকে ২৪০ বর্গ কিলোমিটার জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। উপগ্রহচিত্রে দেখা যায় ভোলার উত্তর-পূর্ব দিকে ভাঙনের প্রবণতা বেশি। যদিও একই সময়ে ৭০ বর্গ কিলোমিটার নতুন চর ভোলার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, কিন্তু ভাঙনের তুলনায় তা যৎসামান্য। পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে জানা যায়, ২০০৪-২০০৮ -এই চার বছর ভাঙনের মাত্রা বেড়েছে, আর ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে তা সর্বোচ্চ হয়েছিল।

কোপেনহেগেনে জলবায়ু বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে (২০০৯) বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে উপস্থাপিত প্রতিবেদনগুলির একটিতে জানানো হয়, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী পদ্মা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা অববাহিকায় প্রায় ১,২০০ কিলোমিটার জুড়ে ভাঙন অব্যাহত আছে। এবং আরও প্রায় ৫০০ কিলোমিটার জুড়ে নতুন করে ভাঙন দেখা দিতে পারে।
ভোলা সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নেরর একটি অংশের নাম ঘর রাজাপুর, অন্য অংশটির নাম বাহির রাজাপুর। বাহির রাজাপুরে ৬ বছর আগেও ১৭টি গ্রাম ছিলো; ভাঙনের ফলে তা এসে ঠেকেছে মাত্র ৬টিতে। পাশাপাশি ২০০৯ সালে ভাঙন কবলিত ছিলো সীতারাম এবং উত্তর রামদাসপুর। মনপুরা উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে বিগত ১৫ বছরের তুলনায় ২০০৯ সালের ভাঙনের হার বেশি।

২০০৯ খ্রিস্টাব্দের প্রেক্ষাপটে হাতিয়ার উত্তর, উত্তর-পূর্ব ও উত্তর-পশ্চিমাংশের তমরদ্দি, চরকিং ও চরঈশ্বর ইউনিয়ন এবং সুখচর ও নলচিরার অবশিষ্টাংশ ব্যাপক ভাঙনের কবলে রয়েছে। নদীভাঙনের পর হাতিয়া উপজেলা পরিষদ ১৯৮৫-৮৬ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান উপজেলা সদর ওছখালিতে স্থানান্তর করা হয়েছিলো। ভাঙনের কবলে ইতোমধ্যেই রাজকুমার সাহার হাট, মনু বেপারির হাট, হিজিমিজির বাজার, নায়েবের হাট, সাহেবের হাট, নলচিরা বাজার, সাহেবানী বাজার, চৌরঙ্গী বাজার, জাইল্লা বাজার, মফিজিয়া বাজার, নলচিরা নতুন বাজার ও ভুঞার হাট মেঘনাগর্ভে হারিয়ে গেছে। হাতিয়া উপজেলা সরকারি কমিশনার (ভূমি) অফিসসূত্রে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ভাঙনের কবলে উপজেলার সাগরদি, চরবাটা, মাইজচরা, চর হাসান-হোসেন, চরকিং, উত্তর চরকিং, কাউনিয়া, চরবগুলা, চরআমানুল্লাহ, দক্ষিণ চরআমানুল্লাহ মৌজাগুলো মেঘনাগর্ভে সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া আরো ২০টি মৌজার বেশিরভাগই নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে।

হাতিয়া যে হারে ভাঙছে, সে হারে নতুন জমি হাতিয়ার সাথে যুক্ত হচ্ছে না। সিইজিআইএস-এর উপগ্রহচিত্র বিশ্লেষিত মত হলো ১৯৭৩-২০০৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত হাতিয়ার মূল ভূভাগ থেকে ১৫০ বর্গ কিলোমিটার জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। দেখা যায়, হাতিয়ার চারদিকই ভাঙছে, তবে প্রবণতা বেশি উত্তরদিকে। পলি জমে দক্ষিণ-পশ্চিমে সাত বর্গকিলোমিটার জমি যুক্ত হলেও ভাঙনের তুলনায় তা যৎসামান্য।

নিঝুম দ্বীপে সরকারি উদ্যোগে গড়ে তোলা বন ধ্বংসের পথে। নদীভাঙন ছাড়াও ঘূর্ণিঝড় আইলায় মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এই কৃত্রিম উপকূলীয় বনটি। দিনে দিনে বনটি ছোট হয়ে আসছে। এই বন বিলুপ্ত হলে ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্দ বঙ্গোপসাগরের আগ্রাসনে টিকতে পারবে না দ্বীপের ২২,০০০-এরও বেশি মানুষ, আর ২০,০০০-এর মতো হরিণ। [তথ্যসূত্র : নেটসহ নানাবিধ সূত্র]

কিন্তু আমার এলাকাসহ অনেক এলাকার মানুষই নদী ভাঙনের কার্যকরী পদক্ষেপের বদলে, নানা অলৌকিক শক্তির কাছে নিজেদের সমর্পন করে, যে কারণে ভাঙন বাড়তেই থাকে। গত বছর বর্ষার দিনে গ্রামে গেলে এমন কয়েকশ' ভাঙন কবলিত পরিবারকে রাস্তায় ঘর তুলে সাময়িক আশ্রয় নিতে দেখি। প্রচন্ড বর্ষায় তাদের ঘরেও পানি ঢুকলে তাদের কষ্টের সীমা থাকে না। অপ্রধান তুচ্ছ এলাকা বিধায় পানি উন্নয়ন বোর্ড বা সরকারের নজর এমন "কেতুপুরের দিকে" কখনো পড়েনি। তাই নিজে কিছু অর্থ নিয়ে তাদের সাহায্যের জন্যে ট্রলার নিয়ে ঘরে ঘরে গিয়ে কিছু খাবার আর রুটি দেয়া শুরু করলে, অভাবী জেলে পরিবারে তা অল্পতেই শেষ হয়ে যায়। এ সমস্যার কোন স্থায়ী সমাধান কখনো হবে কিনা জানিনা আমি। তাই নিজ এলাকার এমন অনাত্মীয় স্বজনদের জন্য মনটা কেঁদে মরে আমার। আরো বেশি কাঁদে যখন বিদেশে মানুষের সুখকর জীবন দেখি, তখন সত্যি আমার নিজ গ্রাম "কেতুপুরের" দৃশ্যে নিজে নিজে রক্তাক্ত হই আমি। ধনকুবের বিল গেটসের কাছে সব জানিয়ে একটা মেল করেছিলাম আমি গত বছর, জবাবো দিয়েছিলেন তিনি, কিন্তু জানিনা কখনো Bill & Melinda Gates Foundation-র নজর পড়বে কিনা জলযুদ্ধে বিধ্বস্ত জলনির্ভর এ মানুষগুলোর প্রতি। যারা জন্ম থেকে জলের সাথে যুদ্ধ করেও টিকে থাকে কিংবা কেউ কেউ টিকতে না পেরে হোসেন মিয়ার নৌকায় পাড়ি দেয় স্বপ্নের ময়নাদ্বীপে, যেখানেও তাদের জন্য অপেক্ষা করছে হরেক ররক জলদানব আর জলরাক্ষসেরা !


লেখাটি ফেসবুকে দেখতে চাইলে নিচের লিংকে যান প্লিজ




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন