রবিবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

আমার পথ চলা, জীবন দহন আর আনন্দের সাতকাহন ! পর্ব : ৪ [কাব্যিক গল্পমালা সিরিজ] গল্প # ৪৬


অবশেষে ফিরে এলাম নিজ কর্মস্থল ঢাকায়। নানা কর্মব্যস্ততার মাঝেও পাগলাবাবার সাথে প্রায় যোগাযোগ হয় নেটে। প্রগতি আর নারী মুক্তির বিষয়ে নানাবিধ পোস্ট ছাড়ে পাগলা বাবা প্রতিনিয়ত। হঠাৎ বিস্মিত করে একদিন জানায় আমাকে- পরিবার, সমাজ আর শহর থেকে পালাতে চায় সে, চায় স্বাধিনতা। ঘেরাটোপের জীবন ভাল লাগেনা তার। সে কোন জনমাবনহীন দ্বীপে গিয়ে বসবাস করতে চায় সে একাকি কিংবা কাউকেসহ! প্রকৃতির মাঝে ঘুরে বেড়াতে চায়; মাছ ধরে, গাছে চড়ে, শিকার করে প্রকৃতির অনুসঙ্গ হয়ে বাঁচতে চায় সে। রাতে ঘাসের বিছানায়, তারার আলোয় ঘুমোতে চায় পাগলাবাবা। ছুঁয়ে দেখতে চায় অন্ধকার আকাশে স্বাতী, উত্তরাষাঢ়া, অশ্বিনী, ভরণী, কৃত্তিকা, রোহিণী, আর্দ্রা, পুনর্বসু, পুষ্যা, অশ্লেষা, পূর্বফাল্গুনী, উত্তরফাল্গুনী, চিত্রা, বিশাখা, অনুরাধা, পূর্বাষাঢ়া, শ্রবণা, শতভিষা, উত্তরভাদ্রপদ আর রেবতী নক্ষত্রের অনন্তে ছুটে চলা আর আলোক বিচ্ছুরণের চিত্রায়ণ। আমি যেন তাকে সহযোগিতা করি এমন কোন দ্বীপের সন্ধান দিয়ে কিংবা সহযাত্রি হয়ে তার!
:
১৪-বছরের পাগলাবাবাকে সান্ত্বনা দেই আমি, এটা এখন বাস্তবসম্মত নয় বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে। কোন দ্বীপই এ অঞ্চলে নেই এখন জনমানবহীন। গিজগিজে ঠাসা নিঝুম দ্বীপ, চরকুকড়িমুকড়ি, ফাতরারচর, চরমন্তাজ, চরআলেকজান্ডার, ঢালচর সবই। দু’য়েকটি যা নতুন চর জেগেছে বঙ্গোপসাগরে, তা যেমন জলদস্যুদের আড্ডাখানা, তেমনি জীবন ধারণের অনুপযোগি এখনো। বরং তুমি চলে যেত পার বাংলাদেশ ছেড়ে ডারউইনের ‘গালাপাগোস’ দ্বীপে! নানা প্রাণিদের সাথে মিলেমিশে থাকবে ওখানে পরম প্রশান্তিতে।
:
তার চেয়ে বরং প্লান করতে পারো পৃথিবীর ছোট ছোট দ্বীপরাষ্ট্রগুলোকে ঘুরে দেখার। ঘুরে দেখতে পারো - সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, সামোয়া, তিমুর লিসতি, টগো, টুকালু, ত্রিনিদাদ এন্ড টোবাগো, তুর্ক ও কইকস দ্বীপপুঞ্জ, এন্টিগুয়া, বারবুদা, অরুবা, বাহামাজ, বারবাডোজ, কেপভার্দে, কেম্যান দ্বীপপুঞ্জ, ক্রিসমাস দ্বীপপুঞ্জ, টোঙ্গা, ককোস দ্বীপপুঞ্জ, কুক আইল্যান্ড, ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ, গুয়াম, কিরিবাতি দ্বীপপুঞ্জ, ম্যাকাও, মাদাগাস্কার, নাউরু, পালাউ, পাপুয়া নিউগিনি, পলিনেশিয়ান দ্বীপমালা, সেন্ট হেলেনা, সেন্ট লুসিয়া, কিটস এন্ড নেভিস, গ্রেনাডা, সেন্ট ভিনসেন্ট এন্ড গ্রিনাডিনস, সেন্ট মেরিনো, সোয়াতম এন্ড প্রিসিপ দ্বীপপুঞ্জ, তুভালু, ভেনাতু, ওয়ালিস ও ফরচুনা আর ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ। 
:
তাকে খুলে বলি পলিনেশিয়ায় আমার ‘টোঙ্গা’ দ্বীপ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, ঘুরে বেড়ানো আর আনন্দের কথা! এতো দ্বীপমালার নাম শুনে ১৪-বছরের প্রজাপতি মনা পাগলাবাবার মন নেচে ওঠে নতুন সব দ্বীপরাষ্ট্র ঘুরে দেখার, গুগলে সার্চ দিয়ে এসব দ্বীপের অবস্থান জেনে পুলকিত আর রোমাঞ্চিত হয় সে। যেন সে আজই যেতে চায় তাসমানিয়া, হাইতি কিংবা ভেনাতু আইল্যান্ডে। এখন প্রত্যহ পাগলাবাবার তাগাদা শুনে গভীর রাতে ঘুমোতে যাই আমি, আর সকালে ঘুম ভাঙে তার ডাকে কখন যাবো তাকেসহ বর্ণিত সব দ্বীপমালায়? যেখানে সে টুকালু দ্বীপের আদি বাসিন্দাদের ট্রাডিশনাল ‘হাইতা’ পোশাক পড়ে নেচে বেড়াবে তাদের প্রাগৈতিহাসিক দেবি “উতাপিকাতুর” কাঠের মূর্তির সামনে? 
:
পুরণ হবে কি পাগলাবাবার এ স্বপ্ন-কথন কখনো? পারবে কি সে পলিনেশিয়া, ক্যারিবিয়ান, প্যাসিফিক, প্রশান্ত আর ভারত মহাসাগরিয় হাজারো ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্রে বসবাসকারি সপ্তপদি মানুষ আর তার সমাজকে দেখার স্বপ্ন পুরণ করতে? হয়তো পারবে হয়তো পারবে না, ভবিষ্যতই পাগলবাবার পথ বলে দেবে, কোথায় যাবে সে তার অজানা পথের সন্ধানে! ছুঁতে পারবে কিনা কোনদিন অনন্ত বিশ্বের মহাজাগতিক নক্ষত্রপুঞ্জকে !
:
উল্লেখ্য আমি নিজেই বাউন্ডেলে টাইপের ভবঘুরে মানুষ, দু’চার পয়সা পকেটে হলেই বিদেশ ঘোরার এক সুতীব্র তাড়নায় ঘরে টিকতে পারিনা আমি।দুরে কোথাও না পারলেও অন্তত ভুটান ঘুরে আসি কদিন।যে কারণে নিতান্তই অ-ধনী মানুষ আমি আর্থনীতিক বিচারে। কারণ যা কামিয়েছি জীবনে, সবই ঢেলে দিয়েছি দেশ দেশান্তরে! কেবল সম্বল ঐ পথচলা, আর পৃথিবীর সকল মানুষের জীবন দহনের ক্রন্দন প্রত্যক্ষণ পৃথিবির পথে পথে!


লেখাটি ফেসবুকে দেখতে চাইলে নিচের লিংকে যান প্লিজ



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন