শুক্রবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

অতলান্তিকে সেন্টিয়াগো, ম্যানোলিন আর আমার মৃত্যুর গল্প ! ৪ পর্বের গল্পটির পর্ব # ৪ [ চলার পথের গল্প # ১৪ ]






[হেমিংওয়ের নোবেল পুরস্কার বিজয়ি The Old Man & The Sea'র প্রধান চরিত্র সেন্টিয়াগোর রূপকে গল্পটি লিখিত]

:
কথা বলতে বলতে হৃদয়ের রিক্তানদীর বাঁধ ভেঙে উপচে পরা দুখগুলোর মাঝে অত্যন্ত চমৎকার একটি উক্তি করে সেন্টিয়াগো। বলে- ‘Man is not made for defeat. Man can be destroyed, but not defeated!' আসলেই, মানুষের জন্ম তো হার মানার জন্য নয়। মানুষ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে কিন্তু কখনো পরাজিত হয় না। শত প্রতিকূলতা, কুৎসিতের মুহূর্মুহু আক্রমণ, একে অপরের থেকে ক্রমাগত বিচ্ছিন্নতা, শ্রেষ্ঠ আর সুন্দরতম অর্জনগুলো ছিনতাই হয়ে যাওয়া। এই চরম হতাশার মাঝেও তবু আমাদেরকে বেঁচে থাকতে হয়। আমাদেরকে বাঁচিয়ে রাখে অযাচিত স্বপ্নেরা। সুন্দরতম আগামীর সে স্বপ্ন নিরন্তর আমাদের জানিয়ে যায়, আসলে মানুষের সকল সময়ই দুঃখসময়, যদি আত্নসমর্পণ করা হয় দুখের কাছে। আর এ বোধের কারণে এক অসম লড়াইয়ে ক্ষতবিক্ষত হতে হতেও পরাজয় স্বীকার না করা এ সাহসি যোদ্ধা বুড়ো সেন্টিয়াগো, চিরতারুণ্যকে ধারণ করে আমাদেরকে অবিরাম প্রেরণা দিয়ে যায় আর বলে, আত্নসমর্পনে কোন মুক্তি নেই, কখনো ছিলও না এবং মানুষ হার স্বীকারের জন্য জন্মেনি; সে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে কিন্তু কখনো পরাজিত হয় না ! বলতে বলতে পুরণো প্রাসাদের বুড়ো ইটের দুখের মত অট্টহাসি হাসে সেন্টিয়াগো, অতলান্তিকের বাতাসে তা অনুরণিত হয় বারবার। 
:
জলের ঋণ শোধরাণোর মতো ক্লেদ করুণতায় সেন্টিয়াগো এবার আটলান্টিকের ঝড়ো বাতাসে চোখ মোছে। আমি কাধে হাত রাখি সেন্টিয়াগোর। দলিত মৃত্তিকা কান্নার শব্দের মত বলি, সেন্টিয়াগো ডাকিনীর চরে রাখালের দুখরা হাটে যেমন, তেমনি তুমি হেঁটেছো এ আটলান্টিক জলচরে। হার্ডলে, পাওলিন, মার্থা, মেরি সবাই ছেড়ে গেছে তোমায় দুখের অকথিত ইতিহাস হয়ে। তুমি বাংলাদেশে যাবে আমার সাথে চলো? সেখানে অনাবাশ্যকীয় ঝড়াপতার গান আছে, শেষাব্দির উপাচারে ভরা কুয়াশা স্রোত আছে, হাঙর আর মার্লিনে ভরা বে অব বেঙ্গল আছে, ছিপ নৌকো আছে, সুখের অনুপম তন্ময়তা আছে। তোমার দুটো হারপুণ আর ম্যানোলিনকে নিয়ে চলো আমার সাথে। প্রিয়তমার নাব্যতা মাপবে তুমি বঙ্গললনার মাঝে, তারা চলে যাবেনা তোমায় ছেড়ে কখনো। ডিঙি বানিয়ে দেব আমি, মৃত হাড়ের বিভাজিত করুণতায় ভরা ডিঙি । তোমার সমুদ্র শিকারের সহযোগি হবো, আমরা দক্ষিণে ভারত মহাসাগর হয়ে শীতল লাব্রাডা স্রোতে যাবো হাতুড়িমুখো হাঙর শিকারে কিংবা শীতল জলের নীলচোখা মার্লিনের খোঁজে ! 
: 
বয়সের ভারে ন্যুজো সেন্টিয়াগো চাঁদোয়া মাঠের ঝাপসা ধোয়াসার কান্নার মাঝেও খিলখিলিয়ে হাসে। তার হারিয়ে যাওয়া জীবন প্রেমহীনতায় যেন সুদাসলে কষ্টের নদীরা স্লোগান তোলে একই করতালে। সাময়িক ধার করা সুখেরা উড়ে যায় দুখের বিভাজনে হঠাৎ। বুড়ো ক্লেদাক্ত সেন্টিয়াগোর স্বপ্নভঙ্গের জলছাপের কান্নাগুলো দুমরে মরে অতলান্তিকের গভীর নীল জলে। হারপুণ হাতে সেন্টিয়াগো নিরীক্ষণ করে জলতলের হাঙরদের। তার অবোধ দুখরা জেগে থাকে সারাক্ষণ তাকে ঘিরে, আমাকে আর ম্যানোলিনকে আঁকড়ে । আবার বাতাসে চোখ তুললে ধ্যানের পিঁড়িতে বসা দুখরা উড়ে আসে মৃতপ্রায় আকাশে। আকস্মিক আটলান্টিক নীলজলে যৌবনময়ী অশরীরী ঝড়ের মাতম ওঠে! সেন্টিয়াগো, ম্যানোলিন আর আমি দুখাতুর পারদর্শী পৌরাণিক প্রেমিকের মত নীল জলে নিমজ্জিত হতে চাই ভাললাগা সময়ের রূপরেখার মত। শান্তসুবোধ অবোধ প্রেমিকের মতো এই প্রথমে সেন্টিয়াগো, ম্যানোলিন ও আমি হ্যামারহেড হাঙর সমৃদ্ধ জলে ঝাপ দেই। আমাদের দুখের অশ্রুজলের ঘ্রাণে ভাসে নীল জলধি। বলিদানের প্রসাদী মাংসের স্তুপের মত হাঙর উৎসবে পুনর্বার জলে ভাসতে আর ডুবতে থাকি আমরা। স্বল্পস্থিতির মাঝে সুখের আকুলতায় আমরা ভাসতে আর ডুবতে থাকি গভীর নীল জলে অবিনশ্বর অমরতা নিয়ে। আমাদের চারপাশে তখন হাতুড়িমুখো অসংখ্য হাঙর, যাদের তাড়িয়ে বেড়ায় সেন্টিয়াগোর স্বপ্নের নীল দানবাকৃতি মার্লিনেরা। আমরা দুখাতুর পৌরাণিক প্রাণির মত হাড়বৃক্ষ, হাড়ঘাস, মৃত মার্লিনের জীবাশ্ম হয়ে অতলান্তিকের গভীর জলে নিমজ্জিত হতে থাকি এক পরম পুলকিত চিত্তে! 
:
[গল্পটি কি শেষ? জানিনা। হয়তো শেষ হয়তো অশেষ]


লেখাটি ফেসবুকে দেখতে চাইলে নিচের লিংকে যান প্লিজ !

https://www.facebook.com/logicalbengali/posts/1686003401633809?notif_t=like

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন