রবিবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

আমার পথ চলা, জীবন দহন আর আনন্দের সাতকাহন ! পর্ব : ২ [কাব্যিক গল্পমালা সিরিজ] গল্প # ৪৪



দাপ্তরিক কাজ সেরে পড়ন্ত বিকেলে একাই প্রস্তুতি নিয়ে কাঠগড়ের পথে হাঁটছি পতেঙ্গার দিকে। একা হাঁটার পথে ১৪/১৫ বছরের এক ছেলের সাথে দেখা, সেও যাচ্ছে ঐ দিকেই নাচতে নাচতে। যেচে আলাপে জানতে চাইলাম, ‘কি নাম তোমার বাবা’? “পাগলাবাবা” হেসে জবাব দিল সে। উত্তর শুনে কিছুটা বিরক্ত আর বিস্মিত হয়ে বললাম, ‘তুমি ভদ্র ঘরের ছেলে বলেই আমার ধারণা, অন্তত জামাকাপড়, চেহারায় তাই মনে হচ্ছে, তো বয়স্ক এ অপরিচিত ব্যক্তির সাথে ‘ফান’ করা কি খাটে তোমার? কিসে পড় তুমি’? বিষ্ময়কর ভাবে সে বললো, ‘তার নাম পাগলাবাবা-ই’ এবং সে ‘ফান’ করেনি। এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। সে তার সঠিক নামই বলেছে। 

:
হাঁটতে হাঁটতে গল্প জমে যায় পাগলাবাবার সাথে। তার কণ্ঠ ও মুখের কমনীয়তায় নারীত্ব লক্ষ্য করলে সে জানায়, আসলে সে মেয়ে। পোশাকে চিন্তনে নারী-পুরুষের বৈষম্য মানেনা সে। আধুনিক পশ্চিমা বিজ্ঞানসম্মত পোশাক, প্রকৃতির মাঝে বিচরণ, হাঁটাহাঁটি, সব কাজ করতে দারুণ পছন্দ তার! প্রচলিত প্রথার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে চায় সে। আসলে নারীবাদি পাগলাবাবা, তাই হয়তো নামটি এমন। তসলিমা নাসরিনের দারুণ ভক্ত এ পাগলাবাবা। কুসংস্কারমুক্ত, বাংলাদেশে বিশ্বাসী আর নারী স্বাধিনতায়!
:
এ বয়সে আমি নারীবাদ, পুরুষবাদ, জেন্ডার, সেক্স এসব টার্ম বুঝতাম না হয়তো ভাল করে। তবে সোভিয়েত ইউনিয়ন সম্পর্কে ব্যাপক পড়ালেখা করে স্কুল জীবনে একবার সোভিয়েত কুইজ প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়ে রাশিয়ান সরকারের প্রণোদনায় রুশ ভ্রমণের সুযোগ হয় আমার ছোটবেলাতে। ওখান থেকেই মনের জানালা খুলে যায় আমার, যে জানালা আর বন্ধ হয়নি। তাই প্রচন্ড শীতে আর তীব্র দাবদাহেও মনের জানালা না খুলে পারিনা আমি। আমার স্বজনরা আমাকে নিয়ে সারাক্ষণ চিন্তিত থাকলেও জানালা খুলেই ঘুমাই আমি।
:
পাগলাবাবার চিন্তন দক্ষতা ও কথোপকথনে বিস্মিত হই। জানলাম পাগলাবাবা নামধারী মেয়েটি কেবল নারীবাদীই নয়, মারাত্মক দেশপ্রেমিক তথা মুক্তিযু্দ্ধপন্থী। কিছুক্ষণ আলাপে তার বুদ্ধির ঝলকে চমকিত আর মোহিত হই আমি।



লেখাটি ফেসবুকে দেখতে চাইলে নিচের লিংকে যান প্লিজ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন